সানস্ক্রিন লাগানোর পরে “পিলিং” হয়? কারণ ও সমাধান

sunscreen-pilling-sarahs-quest

মুখে সানস্ক্রিন মাখার পর কি তা শুষ্ক চামড়ার  মতো হয়ে উঠে আসে বা ছোট ছোট দানায় পরিণত হয়?

এই বিরক্তিকর সমস্যাটির নাম পিলিং (Pilling)। এটি শুধু দেখতেই খারাপ লাগে তাই নয়, আপনার ত্বককে ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিতে বাধা দেয়!  

অনেক পরিচিত এবং দামি সানস্ক্রিনেও এই পিলিং সমস্যা হয়। তবে চিন্তার কিছু নেই! কিছু সহজ টিপস মেনে চললেই আপনার সানস্ক্রিন মসৃণভাবে ত্বকে বসবে এবং তার কাজ করবে।  

সানস্ক্রিন পিলিং হয় কেন?  

১. প্রোডাক্টের অসামঞ্জস্যতা:

জেল-বেসড বা অনেক দ্রুত ত্বকে শোষণ করে নেয়া সানস্ক্রিনে থাকে অ্যালকোহল জাতীয় উপাদান। এগুলো ভারী ময়েশ্চারাইজার বা তেল-সমৃদ্ধ সিরামের সাথে মিশতে চায় না। টেক্সচারে মিল না থাকলে সানস্ক্রিন ত্বকে শোষিত না হয়ে শুষ্ক চামড়ার মতো গুটি বেঁধে ওঠে।  

২. ভেজা বা আঠালো ত্বকে ব্যবহার:

সানস্ক্রিন শুকনো ত্বকের সাথে সহজে মিশে যায়। টোনার বা ফেস মিস্টের পর ভেজা/আঠালো  ত্বকে লাগালে এটি ঠিকভাবে মিশতে পারে না, ফলে দানা বা গুটি গুটি আকারে উঠে আসে।  

৩. ভুল প্রয়োগ পদ্ধতি:

সানস্ক্রিনের বেলায় তাড়াহুড়ো একেবারেই চলবে না! বেশি পরিমাণে একসাথে লাগানো বা জোরে জোরে ঘষে মাখার কারণে এর গঠন ভেঙে যায়, পিলিং তৈরি হয়।  

সানস্ক্রিন স্মার্টলি ব্যবহারের টিপস  

১. ত্বককে শুকিয়ে নিন:

ক্লিনজিং বা স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট মাখার পর অন্তত ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ভেজা ত্বকে সানস্ক্রিন = পিলিংয়ের মূল কারণ!  

২. অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার পরিহার করুন:

অধিকাংশ সানস্ক্রিনেই হাইড্রেটিং উপাদান থাকে। এর নিচে আবার ভারী ময়েশ্চারাইজার লাগালে সানস্ক্রিন ত্বকে বসতে পারে না।  

৩. প্রোডাক্ট বাছাইয়ে সতর্ক হোন:

আপনার ত্বকের ধরণ ও রুটিনের সাথে মানানসই সানস্ক্রিন খুঁজে নিন। জেল টেক্সচার কম্বিনেশন বা মিশ্র ত্বকে ভালো কাজ করে, শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বেসড উপযোগী।  

৪. ত্বকের টেক্সচারের যত্ন নিন:

শুষ্ক, ফ্লেকি বা রুক্ষ ত্বকে সানস্ক্রিন অসমভাবে বসে। নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন (সপ্তাহে ১-২ বার) ও হাইড্রেশন ত্বককে মসৃণ রাখবে।  

৫. ধীরে, আলতো হাতে মাখুন:

পর্যাপ্ত পরিমাণ (মুখের জন্য দুই আঙুলের সমান দৈর্ঘ্য) সানস্ক্রিন নিন। জোরে ঘষবেন না! হাতের তালু দিয়ে চেপে চেপে, ধীরে ধীরে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন।  

রি-অ্যাপ্লিকেশন (পুনরায় প্রয়োগ) জরুরি!  

সানস্ক্রিন সারাদিন স্থায়ী হয় না। রোদে থাকলে, ঘামলে বা সাঁতার কাটলে প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর  আবার লাগাতে হবে। এমনকি “ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট” বা “পানি প্রতিরোধী” লেবেল থাকলেও পানিতে ৪০/৮০ মিনিট পর এর কার্যকারিতা কমে।  

শুধু সানস্ক্রিনই যথেষ্ট নয়!  

সানস্ক্রিন শক্তিশালী, কিন্তু একমাত্র ভরসা নয়। সম্পূর্ণ সুরক্ষা পেতে:  

  • চওড়া কানওয়ালা টুপি
  • অতিবেগুনী রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদানকারী  কাপড়
  • সানগ্লাস/রোদচশমা 
  • দুপুর ১০টা-বিকেল ৪টার মধ্যে ছায়ায় থাকা

সতর্কতা: বালি, পানি, তুষার এমনকি রাস্তা থেকেও অতিবেগুনী রশ্মি প্রতিফলিত হয়। ছায়ায় বসেও তাই সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি।  

শেষ কথা  

পিলিং মানেই আপনি ভুল করছেন তা নয়! শুধু রুটিনে সামান্য বদল আনতে হবে। সঠিক প্রোডাক্ট, সময়োপযোগী ব্যবহার ও সঠিক পদ্ধতি মেনে চললে সানস্ক্রিন হয়ে উঠবে আপনার ত্বকের নীরব রক্ষী।  

সানস্ক্রিন শুধু সুরক্ষা নয়, ভবিষ্যতের নিজের প্রতি যত্নের অভ্যাস। মসৃণভাবে প্রয়োগ করলে সানস্ক্রিন শুধু সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেই বাঁচায় না, ব্যবহারেও দারুণ আরামদায়ক লাগে — কোন পিলিং, কোন ঝামেলা ছাড়াই!

Leave a Comment

Scroll to Top